হাদিসে বর্ণিত "কুকুরের মত হাত বিছিয়ে সিজদা" র ব্যাখ্যা কি ? মেয়েদের নামাজে কি এটি প্রযোজ্য?
প্রশ্নঃ ৩২৯৯৬. আসসালামুআলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহ, আসসালামুআলাইকুম ওয়া রাহমাতুল আমি একজন মহিলা, আমার প্রশ্ন হল? আমি সিজদা সাবাভিক ভাবে যেরকম উলামারা বলে থাকেন দুই হাটু সহ সমস্থ শরির বিছিয়ে পড়ি,এখন আমার এক বোন একবার হজ এ গিয়েছিলেন তখন তিনিও আমার মত সিজদা করছিলেন,তখন সেখানকার মহিলারা তাকে এরকম সিজদা করতে বাধা দেয় এবং পুরুষদের মত কোমর উচু করে পা খারা করে পড়তে বলে,এখন তিনি ও পুরুষের মত সিজদা করেন আর বলেন সকল দেশে নাকি পুরুষ ও মহিলা এক রকম ভাবে সিজদা করে শুধু নাকি আমাদের দেশে মহিলা ও পুরুষ আলাদা আলাদা ভাবে সিজদা করে তাই তিনিও পুরুষদের মত সিজদা করেন, তারা নবীজির সেই হাদিছ যেখানে নবীজি বলেছিলেন ("তোমরা কুকুরের মত সিজদা করনা আমাকে যেভাবে করতে দেখেছ সেভাবে কর)" এই হাদিছ দিয়ে দলিল দেন। এখন দয়া করে আমাকে এই বেপারে বিস্তারিত দলিল সহ উলামাদের মত সহ,কোন মতের উপর ফতুআ সেটি ও বলেন দয়া করে যাতে বিষয়টি সুন্দর ভাবে সমাধান হয়ে যায়।
উত্তর
و علَيْــــــــــــــــــــكُم السلام ورحمة الله وبركاته
بسم الله الرحمن الرحيم
নারী-পুরুষের শারীরিক গঠন, সক্ষমতা, নিরাপত্তা ইত্যাদি নানা বিষয়ে যেমন পার্থক্য রয়েছে, তেমনি পার্থক্য রয়েছে ইবাদতসহ শরীয়তের অনেক বিষয়ে। যেমন, সতর। পুরুষের সতর হচ্ছে নাভী থেকে হাঁটু পর্যন্ত, পক্ষান্তরে পরপুরুষের সামনে মহিলার প্রায় পুরো শরীরই ঢেকে রাখা ফরয। নারী-পুরুষের মাঝে এরকম পার্থক্যসম্বলিত ইবাদত সমূহের অন্যতম হচ্ছে নামায। তাকবীরে তাহরীমার জন্য হাত উঠানো, হাত বাধা, রুকু, সেজদা, ১ম ও শেষ বৈঠক ইত্যাদি ক্ষেতগুলোতে পুরুষের সাথে নারীর পার্থক্য রয়েছে। তাদের সতরের পরিমান যেহেতু বেশী, তাই যেভাবে তাদের সতর বেশী রক্ষা হয় সেদিকটিও বিবেচনা করা হয়েছে এ ক্ষেতগুলোতে। মুসলিম উম্মাহর প্রায় দেড় হাজার বছরের অবিচ্ছিন্ন আমলের ধারা তাই প্রমাণ করে। বিষয়টি প্রমাণিত রাসূলে কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের হাদীস, সাহাবায়ে কেরাম ও তাবেয়ীগণের ফতোয়া ও আছারের মাধ্যমেও।
তাবেয়ী ইয়াযীদ ইবনে আবী হাবীব র. বলেন,
.... أن رسول الله - صلى الله عليه وسلم - مر على امرأتين تصليان، فقال: اذا سجدتما فضما بعض اللحم الى الأرض، فإن المرأة ليست في ذلك كالرجل. (كتاب المراسيل للإمام أبو داود)
একবার রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নামাযরত দুই মহিলার পাশ দিয়ে যাচ্ছিলেন। তখন তাদেরকে (সংশোধনের উদ্দেশ্যে ) বললেন, যখন সেজদা করবে তখন শরীর যমীনের সাথে মিলিয়ে দিবে। কেননা মহিলারা এ ক্ষেত্রে পুরুষদের মত নয়।” (কিতাবুল মারাসীল, ইমাম আবু দাউদ, হাদীস ৮০)
হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে উমর রা. থেকে বর্ণিত,
قَالَ رَسُولُ اللَّهِ -صلى الله عليه وسلم- : إِذَا جَلَسْتِ الْمَرْأَةُ فِى الصَّلاَةِ وَضَعَتْ فَخِذَهَا عَلَى فَخِذِهَا الأُخْرَى ، وَإِذَا سَجَدْتْ أَلْصَقَتْ بَطْنَهَا فِى فَخِذَيْهَا كَأَسْتَرِ مَا يَكُونُ لَهَا ، وَإِنَّ اللَّهَ تَعَالَى يَنْظُرُ إِلَيْهَا وَيَقُولُ : يَا مَلاَئِكَتِى أُشْهِدُكُمْ أَنِّى قَدْ غَفَرْتُ لَهَا . رواه البيهقي في السنن الكبرى ٢/٢٢٣ في كتاب الصلاة (باب ما يستحب للمرأة من ترك التجافي في الركوع والسجود)، وفيه أبو مطيع البلخي وقال العقيلي فيه : كان مرجئا صالحا في الحديث.
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, মহিলা যখন এই ঔনামাযের মধ্যে বসবে তখন যেন (ডান) উরু অপর উরুর উপর রাখে। আর যখন সেজদা করবে তখন যেন পেট উরুর সাথে মিলিেেয় রাখে; যা তার সতরের জন্য অধিক উপযোগী। আল্লাহ তাআলা তাকে দেখে (ফেরেশতাদের সম্বোধন করে) বলেন, ওহে আমার ফেরেশতারা! তোমরা সাক্ষী থাক, আমি তাকে ক্ষমা করে দিলাম। সুনানে কুবরা, বায়হাকী ২/২২৩
হাদীসে রাসূল, সাহাবা ও তাবেয়ীনের ফতোয়া ও আছারের মতোই চার মাযহাবের চার ইমামের প্রত্যেকেই পুরুষের সাথে মহিলাদের নামাযের পার্থক্যের কথা বলেছেন। মুসলিম উম্মাহর অনুসৃত উপরোক্ত কেউ-ই বলছেন না, মহিলাদের নামায পুরুষের নামাযের অনুরূপ। বরং সকলেই বলছেন, পুরুষের নামায থেকে মহিলার নামায কিছুটা ভিন্ন।
(দলীলসহ নামাজের মাসায়েল অবলম্বনে)
তোমরা কুকুরের মতো নামাজ পড়ো না, এ বিষয়ে বিস্তারিত জানতে নিচের লিংকে ক্লিক করুন।
https://www.alkawsar.com/bn/article/1758/
والله اعلم بالصواب
উত্তর দাতা:
মুহাদ্দিস, জামিয়া বাবুস সালাম, বিমানবন্দর ঢাকা
মন্তব্য (0)
কোনো মন্তব্য নেই। প্রথম মন্তব্য করুন!
মন্তব্য করতে লগইন করুন